বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

আদালতের নির্দেশনার ভুল ব্যাখ্যায় পদোন্নতি ১৫ ল্যাব অ্যাটেনডেন্টের

আদালতের নির্দেশনার ভুল ব্যাখ্যায় পদোন্নতি ১৫ ল্যাব অ্যাটেনডেন্টের

স্বদেশ ডেস্ক:

২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ১৫ জন ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালককে করা আবেদনটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আবেদনকারীরা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার পরও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সরাসরি আবেদন করেন। তারা একটি সাদা কাগজে সম্মিলিতভাবে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে তাদের কর্মস্থলের নাম-ঠিকানা উল্লেখ ছিল না। এ রকম একটি আবেদনপত্র বিবেচনায় নিয়ে অধিদপ্তর ১৫ জন ল্যাব অ্যাটেনডেন্টকে পদোন্নতি দেয়।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগীয় নন-মেডিক্যাল কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০১৮-এ ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্টকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে পদোন্নতির ধারা বেআইনি। এই আদেশ বাতিল ঘোষণায় বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে উচ্চ আদালত স্বাস্থ্য সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ নিয়োগবিধি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে একটি রিট মামলা করা হয়। যার রিট মামলা নম্বর ৮৫৯৬/২০১৮। ২০১৮ সালের ২ জুলাই বিচারপতি জেবিএম হাসান ও মো. খাইরুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ নিয়োগবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করে। একই সঙ্গে বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালকে জানানো হয়। এমনকি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ল্যাব অ্যাটেনডেন্টদের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে পদোন্নতি না দেওয়ারও আবেদন করেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগীয় নন-মেডিক্যাল কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০১৮ এখনো সংশোধনীর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তাই আগের নিয়োগবিধি চূড়ান্ত নিয়োগবিধি নয়। তা ছাড়া এ বিষয়ে একটি মামলা উচ্চ আদালতে চলমান। সে ক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো আদেশ প্রদান আইনসম্মত নয়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম আমাদের সময়েক বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান নিয়োগবিধি অনুসরণ করা হয়েছে। নিয়মিত পদোন্নতি বিষয়টি ডিপিসির মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেহেতু ১৫ জন আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এসেছিল, তাই তাদের নিজ বেতনে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য যে ১৫ জন আবেদন করেন, তারা একই বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি করা ওই মামলার আদেশে অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালকে বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানে পদোন্নতি দিতে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না।

তবে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ১৫ জন ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্টকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে নিজ বেতনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এবং আদালতের নির্দেশনার ভুল ব্যাখ্যা করে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতে দায়ের করা ১৪৬৬/২০২০ মামলার নির্দেশনা এবং নিয়োগবিধির আলোকে কর্মচারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

এর প্রেক্ষিতে গত ৩০ আগস্ট বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রুল জারি করে। রুলে জানতে চাওয়া হয় ১৫ জন ল্যাব অ্যাটেনডেন্টকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে পদোন্নতি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম স্বাক্ষরিত গত ২৯ ডিসেম্ব^রের আদেশ কেন অবৈধ হবে না। একই সঙ্গে চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ), আইন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালককে (প্রশাসন) এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৮ সালে সরকার স্বাস্থ্য বিভাগীয় নন মেডিক্যাল কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০১৮ জারি করে। সেখানে ল্যাব অ্যাটেনডেন্টদের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) পদে পদোন্নতির বিধান রাখা হয়। পরে ওই বিধানটি চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে বিপিএসএমটিএর সভাপতি মো. শফিকুল ইসলামসহ চারজন হাইকোর্টে একটি রিট করেন। ওই বছরের ২ জুলাই শুনানি নিয়ে এ বিষয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ল্যাব অ্যাটেনডেন্টরা আগের রিটের তথ্য গোপন করে হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। পরে ওই রিটের সূত্র ধরে ১৫ জনকে ল্যাবরেটরি পদে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর পদোন্নতি আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই পদোন্নতি আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ফের হাইকোর্টে আবেদন করেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা। সেখানে বলা হয়েছে, ১৫ জন ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্টকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে নিজ বেতনে পদোন্নতির আদেশটি জনস্বার্থবিরোধী এবং নিয়মনীতির লঙ্ঘন। উচ্চ আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনার ভুল ব্যাখ্যা করে ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট পদধারীদের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে পদোন্নতির (রিট পিটিশন নং ৮৫৯৬/২০১৮ বিচারাধীন) আদেশটি বেআইনি এবং সর্বোচ্চ আদালত অবমাননার শামিল।

এ বিষয়ে বেকার এন্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উচ্চ আদালত এবং নিয়োগবিধির দোহাই দিয়ে অযোগ্য, প্রশিক্ষণবিহীন ল্যাব অ্যাটেনডেন্টদের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। এতে সারাদেশের টেকনোলজিস্টদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এই আদেশ বাতিলে ২৪ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতিকার চেয়ে পুনরায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে গত ৩০ আগস্ট আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা ও বাতিল করা হবে না মর্মে রুল জারি করে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট পদধারীদের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে পদোন্নতির আদেশ বাতিল করা না হলে আদালত অবমাননার মামলা করতে আমরা বাধ্য হব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877